বাংলাখবর
লস অ্যাঞ্জেলেসে ৭০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ, ৫ জনের মৃত্যু
ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল
বাংলা খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কাছাকাছি কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে অন্তত ৭০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাবানলের তীব্রতা এতটাই বেশি যে এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং এক হাজারেরও বেশি বাড়ি পুড়ে গেছে। বুধবার রাত পর্যন্ত দাবানলটি একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে।
দাবানল শুরু হওয়ার আগে, ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিওএস) এই সপ্তাহের শুরুতে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বেশিরভাগ অঞ্চলে তীব্র অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা জারি করেছিল। বিশেষত, শুষ্ক আবহাওয়া এবং অগ্নিসংবেদনশীল গাছপালা এ অবস্থার জন্য দায়ী। বর্তমানে আগুনের প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে, উদ্ধারকর্মীরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও দাবানল ঠেকাতে পারছেন না।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির সুপারভাইজার লিন্ডসে হর্ভাথ জানিয়েছেন, ‘এটি একটি গভীর ট্র্যাজেডি, এবং যারা এই আগুনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য আমাদের সহানুভূতি রইলো।’
দাবানলের বিস্তার ও ক্ষয়ক্ষতি
লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে বড় দাবানলটি প্যাসিফিক পালিসাডেস এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি পর্যটন ও বসবাসযোগ্য এলাকা, যেখানে বহু সেলিব্রিটি এবং ধনী মানুষ বাস করেন। দাবানলটি ইতোমধ্যেই ৫ হাজার একরেরও বেশি এলাকা পুড়িয়ে ফেলেছে। স্থানীয় ফায়ার চিফ অ্যান্থনি মেরন জানান, এক হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরও হাজার হাজার বাড়ির জন্য হুমকি রয়েছে।
এছাড়া, ইটন ফায়ার নামে আরেকটি দাবানল, আলতাদেনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। যা এখন পর্যন্ত ২ হাজার একর জমি পুড়ে ফেলেছে। এখানেই ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই আগুনের তীব্রতা এবং গতিবেগের কারণে মানুষের পক্ষে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সুযোগও অনেক সময় তৈরি হচ্ছে না।
হারস্ট ফায়ার, লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে সিলমার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ৫০০ একরের বেশি জমি পুড়েছে। এই আগুনের গতি এবং তীব্রতা উদ্ধারকর্মীদের কাজ অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছে।
নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় ও উদ্ধারকর্মীদের সংগ্রাম
দাবানলে নিহতদের মধ্যে দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এখনও নিহতদের পরিচয় জানানো হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষতির ঘটনা ঘটে তাদের ক্ষেত্রে, যারা সতর্কতার আগেই বাড়ি ছাড়তে পারেননি। একাধিক স্থান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায়, হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেওয়ার জন্য অন্যত্র পালিয়েছেন।
অ্যান্থনি মেরন জানান, ‘আমাদের এত বড় আকারের দাবানলের মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও কর্মী নেই। ২৯টি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট একসাথে কাজ করলেও এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করা খুবই কঠিন।’
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, দাবানলটি এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে, তাদের কাছে থাকা সীমিত জলসংকট এবং অত্যন্ত তীব্র বাতাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে যে, দাবানল ঠেকানোর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ সংকটে পড়েছে বেশিরভাগ কর্মী।
ফেডারেল সহায়তার আশ্বাস
তবে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোমধ্যেই দাবানল সম্পর্কিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। তিনি ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলেছে যে, ফেডারেল সংস্থাগুলো—যেমন, ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ) এবং ন্যাশনাল গার্ড—স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
দাবানলের প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তন
দাবানলগুলোর এই বিস্তার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। লিনডন প্রোন্টো, এক সাবেক ওয়াইল্ডল্যান্ড ফায়ারফাইটার এবং বর্তমানে ইউরোপিয়ান ফরেস্ট ইনস্টিটিউটের অগ্নি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, বলেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ার আগুনের মৌসুম এখন দীর্ঘতর হয়ে গেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগুন লাগার ঝুঁকির দিনগুলো দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার জন্য গাছপালা শুষ্ক হওয়ার পরিমাণ, বাতাসের গতি এবং উচ্চ তাপমাত্রা এসব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আগুন ঠেকানোর জন্য আমাদের নতুন কৌশল ও প্রস্তুতির প্রয়োজন।’
দাবানাল আরও বাড়তে পারে
বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, দাবানল আরও বিস্তৃত হতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
দাবানল মোকাবিলা করতে গিয়ে উদ্ধারকর্মীরা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করছেন, আর সাধারণ মানুষও নানা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। পরিস্থিতি কতটা দ্রুত উন্নতি হবে তা এখনও বলা সম্ভব নয়, তবে উদ্ধার ও সহায়তার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক পালিসাডেস এলাকায় একাধিক ভবন পুড়তে থাকা অবস্থায় অগ্নিনির্বাপকরা দাবানল মোকাবিলা করছেন। ছবি: এপি
উদ্ধারকর্মীদের সাথে সহায়তায় স্থানীয় জনগণের প্রচেষ্টা
তবে, স্থানীয় জনগণও এই দুর্যোগে একে অপরকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসছেন। অনেকেই নিজে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে অপরদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয় শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিতে আসা মানুষদের জন্য সাহায্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে, ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ একসাথে এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে একত্রিত হয়ে কাজ করছেন। যদিও আগুনের তীব্রতা কমানো সম্ভব হয়নি, তবে মানুষ একে অপরকে সহায়তা করে চলেছেন।
এই বিভাগের আরও খবর
লস অ্যাঞ্জেলেসে ৭০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ, ৫ জনের মৃত্যু
লস অ্যাঞ্জেলেসে ৭০ হাজার মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ, ৫ জনের মৃত্যু
গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিতে ট্রাম্পের হুমকি, বৈঠকে ডেনমার্কের রাজা
গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিতে ট্রাম্পের হুমকি, বৈঠকে ডেনমার্কের রাজা
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর চাঁদা বাড়ানোর পরামর্শ ট্রাম্পের
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর চাঁদা বাড়ানোর পরামর্শ ট্রাম্পের
ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস
ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস
ট্রুডোর পদত্যাগ, কানাডাকে ফের অঙ্গরাজ্য বানাতে চাইলেন ট্রাম্প
ট্রুডোর পদত্যাগ, কানাডাকে ফের অঙ্গরাজ্য বানাতে চাইলেন ট্রাম্প
শেষ সময়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন বাইডেন
শেষ সময়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন বাইডেন
ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, নিহত ৫
ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র, নিহত ৫
মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা
মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা
ভয়াবহ তুষারঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্র, ৭ রাজ্যে জরুরি অবস্থা
ভয়াবহ তুষারঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্র, ৭ রাজ্যে জরুরি অবস্থা
হঠাৎ ট্রাম্পের বাসভবনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি
হঠাৎ ট্রাম্পের বাসভবনে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি
শেষ মুহূর্তে যাদের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল দিলেন বাইডেন
শেষ মুহূর্তে যাদের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল দিলেন বাইডেন
ধসে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ববাসী হাসছে: ট্রাম্প
ধসে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ববাসী হাসছে: ট্রাম্প