বাংলাখবর

মার্কিন মসনদে ট্রাম্প, যা বলছেন বিশ্ব নেতারা

বাংলা খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের জয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

এদিন নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকা আমাদের একটি অভূতপূর্ব ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে। মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) রাতে ফ্লোরিডায় নিজের প্রচারাভিযানের সদর দপ্তরে সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা আমাদের একটি নজিরবিহীন ও শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে। এটি আমেরিকান জনগণের জন্য একটি দুর্দান্ত বিজয়, যা আমাদের আমেরিকাকে আবার মহান করার সুযোগ দেবে।

ফলাফল সামনে আসার আগে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে ভাষণের সময় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের "সোনালি যুগ" আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। যদিও ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস এখনও পরাজয় স্বীকার করেননি। তবে ট্রাম্পের এই জয়ের পর বিশ্বের নেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ইসরায়েল
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তন উল্লেখ করে অভিনন্দন জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক্সে করা এক পোস্টে লিখেছেন, হোয়াইট হাউসে আপনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। এটি একটি বিশাল বিজয়! সত্যিকারের বন্ধুত্বের জয়। এই জয় ইসরায়েল ও আমেরিকার মধ্যে শক্তিশালী বন্ধুত্ব পুনঃস্থাপনের প্রমাণ।

এদিকে ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করে মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েল কাটজকে দায়িত্ব দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের জয়ের পর কাটজ বলেছেন, "আমরা একসঙ্গে মার্কিন-ইসরায়েল জোটকে শক্তিশালী করব। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনব এবং ইরানের নেতৃত্বে থাকা অশুভ অক্ষকে পরাস্ত করতে দৃঢ় হব"।

এছাড়া নেতানিয়াহু সরকারের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রীরাও ট্রাম্পের জয় উদযাপন করেছেন। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেছেন, "ঈশ্বর ট্রাম্পের মঙ্গল করুন", আর অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, "ঈশ্বর ইসরায়েলকে মঙ্গল করুন, ঈশ্বর আমেরিকাকে মঙ্গল করুন।"

কাতার
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বলেছেন, “আমরা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা উন্নয়নে ট্রাম্পের সঙ্গে ফের কাজ করার অপেক্ষায় আছি।”

মিশর
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে সহায়ক হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এক্সে করা এক পোস্টে তিনি বলেন, "আমি তার (ট্রাম্প) সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করি... এবং আমরা একসঙ্গে শান্তিতে পৌঁছানোর পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মিশর-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।"

ইরান
তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন নির্বাচনের কারণে ইরানিদের জীবিকা প্রভাবিত হবে না। তার কথায়, “মার্কিন নির্বাচন আসলে আমাদের ব্যবসা নয়। আমাদের নীতিগুলো স্থির। এগুলো ব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় না।”

হামাস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ট্রাম্পের বিজয় তার আগের বক্তব্য 'কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন' সে কথা বাস্তবায়নের পরীক্ষা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই পরাজয় গাজার প্রতি তাদের নেতৃত্বের "অপরাধী অবস্থানের" স্বাভাবিক মূল্য। আমরা ট্রাম্পকে জো বাইডেনের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানাই।"

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন যে ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে তাদের "অন্ধ সমর্থন" বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি ভবিষ্যতে আমাদের জনগণ এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় শঙ্কা”।

চীন
ট্রাম্পের জয়ের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের নীতি ধারাবাহিক। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সহযোগিতার নীতি অনুসারে চীন-মার্কিন সম্পর্ক পরিচালনা করবো।

ইউক্রেন
ট্রাম্পের জয়ের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “ট্রাম্পের ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ নীতি ইউক্রেনে শান্তি আনতে সহায়ক হতে পারে। এক্সে দেয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, "আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈশ্বিক বিষয়ে 'শক্তির মাধ্যমে শান্তি' পদ্ধতির প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করি। এটি ঠিক সেই নীতি যা কার্যত ইউক্রেনে শান্তি আনতে পারে। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তমূলক নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুগের অপেক্ষায় আছি।"

রাশিয়া
ট্রাম্পের জয়ের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি "বন্ধুত্বহীন দেশ" হওয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানোর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কোনও পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতি তাদের নির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও কথার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

যুক্তরাজ্য
প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, “আপনার ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আমাদের মূল্যবোধের রক্ষায় আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।”

ন্যাটো
ন্যাটো সেক্রেটারি-জেনারেল মার্ক রুট বলেছেন, "আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। তার নেতৃত্ব আমাদের জোটকে শক্তিশালী রাখতে হবে। আমি ন্যাটোর শক্তির মাধ্যমে শান্তি এগিয়ে নিতে তার সঙ্গে আবার কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।"

ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেছেন “ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু মিত্র নয়। আমরা আমাদের জনগণের মধ্যে একটি সত্যিকারের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আবদ্ধ, ৮০০ মিলিয়ন নাগরিককে একত্রিত করছি। তাই আসুন একটি শক্তিশালী ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক এজেন্ডায় একসঙ্গে কাজ করি।"

ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি চার্লস মিশেল বলেছেন, ২৭-জাতি ব্লক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের "একটি স্থায়ী জোট এবং একটি ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। মিত্র এবং বন্ধু হিসেবে, ইইউ আমাদের গঠনমূলক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।"

ফ্রান্স
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এক্স-এ লিখেছেন, “ট্রাম্পের সঙ্গে আবার কাজ করতে প্রস্তুত আমরা।”

অস্ট্রেলিয়া

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বিশ্ব ও আমাদের অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছে। অস্ট্রেলিয়া এই অঞ্চলে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার চেষ্টা করবে।”

ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে এক্সে করা এক পোস্টে বলেছেন, "আপনার পূর্ববর্তী মেয়াদের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে আমি ভারত-মার্কিন ব্যাপক বৈশ্বিক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে আমাদের সহযোগিতার পুনর্নবীকরণের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।"

পাকিস্তান
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দ্বিতীয় মেয়াদে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, আমি পাকিস্তান-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো শক্তিশালী এবং প্রসারিত করতে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছি।

এছাড়া ঐতিহাসিক জয়ের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছে, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও রোমানিয়াসহ অন্যান্য দেশ।

সূত্র : আল জাজিরা