বাংলাখবর

বাদামচাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার

বাংলা খবর ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১০০ বছর বয়সে এসে মৃত্যুবরণ করেছেন। রোববার তিনি জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতেই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে তার ফাউন্ডেশন- কার্টার সেন্টার নিশ্চিত করেছে।

জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত জিমি কার্টার ক্ষমতায় এসেছিলেন আমেরিকান জনগণের কাছে কখনো মিথ্যা না বলার অঙ্গীকার করে। আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর জর্জিয়ার সাবেক এই বাদামচাষিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো নেতা, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিমি কার্টারের দায়িত্ব পালন সুখকর ছিল না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কূটনৈতিক সংকট সামলাতে না পেরে এক মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি তিনি।

পরে মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজের সুনাম পুনরুদ্ধার করেন জিমি কার্টার, যার স্বীকৃতি পান শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে।

কৃষক থেকে প্রেসিডেন্ট
জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র ১৯২৪ সালের পয়লা অক্টোবর জর্জিয়ার ছোট শহর প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়। তার বাবা পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে বাদাম চাষ করতেন, আর তার মা লিলিয়ান ছিলেন একজন নার্স।

স্কুলজীবনে তিনি ছিলেন একজন তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে সাত বছর কাজ করে সাবমেরিন কর্মকর্তা হয়েছিলেন। সে সময়েই তার বন্ধুর বোন রোজালিনকে বিয়ে করেন।
১৯৫৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরতে ফিরে আসেন। তার রাজনীতিতে প্রবেশ হয়েছিল একেবারে তৃণমূল থেকে।

জর্জিয়ার সিনেটর নির্বাচনের আগে তিনি ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় স্কুল ও লাইব্রেরি বোর্ডের নির্বাচনগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন।
দুই দফায় সিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর হন। এ সময় তিনি প্রকাশ্যেই নাগরিক অধিকারের পক্ষে আরো বেশি কথা বলতে শুরু করেন। তার শপথ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবেই বলতে চাই, বর্ণবৈষম্যের সময় পার হয়ে গেছে।’ তিনি ক্যাপিটল ভবনে মার্টিন লুথার কিংয়ের ছবি স্থাপন করেন এবং আফ্রিকান আমেরিকানরা যেন সরকারি অফিসে নিয়োগ পান তা নিশ্চিত করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরু করেন, তখন আমেরিকা উত্তাল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে। এ সময় তিনি পেশাদার রাজনীতিকের চেয়ে একজন বাদামচাষি হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেন। শুরুতে জনমত জরিপগুলো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তার মাত্র চার শতাংশ সমর্থনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ৯ মাস পর তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে দেন।

দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। রিপাবলিকান সমালোচক সিনেটর ব্যারি গোল্ডওয়াটার এটিকে ‘একজন প্রেসিডেন্টের জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কার্টারও স্বীকার করেছিলেন যে এটা ছিল তার জন্য খুবই কঠিন একটি সিদ্ধান্ত।

তিনি তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়ে এসেছিলেন। তিনিই প্রথম কোনো বিশ্বনেতা, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি হোয়াইট হাউসের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছিলেন, যা পরে রোনাল্ড রিগ্যান সরিয়ে ফেলেন।

তার সময় আমেরিকার অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়ে এবং এ কারণে তার জনপ্রিয়তায়ও ধস নামে। তিনি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিকল্পনা করলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে পারেননি।

শান্তির সন্ধানে
জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছিল। তাঁর শাসনকালেই ইরানে মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ জন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই জিম্মিদশার অবসান হয়। অবশ্য ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কার্টারের ভূমিকা ছিল। এর মধ্য দিয়ে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্ভব হয়।

হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন জিমি কার্টার। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার রক্ষা, দেশে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে কর্মসূচিও। আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সাধন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
 

এই বিভাগের আরও খবর

এবার নিউইয়র্ক সিটিতে গুলিবর্ষণ, আহত ১০
এবার নিউইয়র্ক সিটিতে গুলিবর্ষণ, আহত ১০

এবার নিউইয়র্ক সিটিতে গুলিবর্ষণ, আহত ১০

বাইডেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ‘বাজে প্রেসিডেন্ট’: ট্রাম্প
বাইডেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ‘বাজে প্রেসিডেন্ট’: ট্রাম্প

বাইডেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ‘বাজে প্রেসিডেন্ট’: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫
যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫

যুক্তরাষ্ট্রে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫

এবার নিউইয়র্কের নৈশ ক্লাবে বন্দুকধারীর হামলা
এবার নিউইয়র্কের নৈশ ক্লাবে বন্দুকধারীর হামলা

এবার নিউইয়র্কের নৈশ ক্লাবে বন্দুকধারীর হামলা

ট্রাম্পের সমালোচক লিজ চেনিকে পদক দেবেন বাইডেন
ট্রাম্পের সমালোচক লিজ চেনিকে পদক দেবেন বাইডেন

ট্রাম্পের সমালোচক লিজ চেনিকে পদক দেবেন বাইডেন

শান্তিময় পৃথিবী কামনা করে নতুন বছরকে স্বাগত
শান্তিময় পৃথিবী কামনা করে নতুন বছরকে স্বাগত

শান্তিময় পৃথিবী কামনা করে নতুন বছরকে স্বাগত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সে হামলাকারীর কাছে ছিল আইএসের পতাকা
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সে হামলাকারীর কাছে ছিল আইএসের পতাকা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সে হামলাকারীর কাছে ছিল আইএসের পতাকা

দুই দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা
দুই দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

দুই দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে নিহত ১০, আহত ৩০ জনের বেশি
যুক্তরাষ্ট্রে নিহত ১০, আহত ৩০ জনের বেশি

যুক্তরাষ্ট্রে নিহত ১০, আহত ৩০ জনের বেশি

মাইক জনসনকেই স্পিকার পদে বহাল রাখতে চান ট্রাম্প
মাইক জনসনকেই স্পিকার পদে বহাল রাখতে চান ট্রাম্প

মাইক জনসনকেই স্পিকার পদে বহাল রাখতে চান ট্রাম্প

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম হ্যাক করেছে চীন; দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম হ্যাক করেছে চীন; দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম হ্যাক করেছে চীন; দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

বাদামচাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার
বাদামচাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার

বাদামচাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার