বাংলাখবর

আগামী বাজেটের আকার খুব একটা বাড়ছে না

আসিফ শওকত : অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃচ্ছ্রতা সাধন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের  বাজেট ঘোষণা করা হবে। ফলে আশানুরূপভাবে এই বাজেট বাড়ছে না। বাজেটের আকার মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় বেড়েছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বাজেটের আকার বৃদ্ধির হার কম হওয়ার কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ সহায়তার কঠিন শর্ত আর দেশের আর্থিক সংকটের ভয়াবহতা।

নতুন বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক নীতির সঙ্গে রাজস্ব নীতির সমন্বয়। এছাড়া রাজস্ব আহরণ কম, প্রবাসী আয় ভয়াবহ রকমভাবে কমে যাওয়া, আমদানি ও রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় বাজেট বাড়ছে না।

দেশের সার্বিক আর্থিক বিষয় বিবেচনায় রেখে অর্থ বিভাগ আগামী অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার দাঁড় করিয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

একইসঙ্গে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্ব কমিয়ে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। আইএমএফের শর্তের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট মনিটরিং, বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সাধারণত ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়।

বৈঠকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া সরকারের ঋণের সুদহার বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। কারণ, সুদ পরিশোধে সরকারের অনেক ব্যয় হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। এজন্যই চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বাড়ানো হতে পারে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের আকার এবং চলতি সংশোধিত বাজেটের তথ্য তুলে ধরা হবে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর বাজেটের প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১২ শতাংশ ধরেই প্রাক্কলন করা হয়। এবার সেটি ৫ শতাংশের নিচে বাড়বে। এর কারণ হচ্ছে বড় বাজেট দিতে হলে রাজস্ব আদায় সেরকম থাকতে হবে। রাজস্ব আদায় কম, আমদানি ও রপ্তানি কমছে। এসব বিষয় বিবেচনায় বড় বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়।

আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার

মোট ব্যয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আয় ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে চলতি বাজেটের চেয়ে আকার বাড়ছে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।  বিদেশি সহায়তা আর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। বাকিটা অভ্যন্তরীণ সম্পদ এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পূরণ করা হবে।

জানতে চাইলে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  বলেন, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি আর মার্কিন ডলারের সংকটময় পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণমূলক বাজেট নেওয়ার কোন মানে নেই। এরপরও যে প্রাক্কলন করা হয়েছে সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন হয় দেখার বিষয়। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর দূর্বল ইমেজের জন্য বিনিয়োগ হচ্ছে না। নির্বাচনের পরও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। এক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে।

তিনি আরো বলেন, ঈদের সময়ে দোকান আর বাজরে মানুষজনের ভিড় নেই। কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। এর সঙ্গে দেশের মূল্যস্ফীতি এখনও ৯ শতাংশের ওপরে বিরাজ করছে। এটি কমে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

অর্থ বিভাগ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ছে। এখন সুদের হার সাড়ে ১৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। আমদানি কমানো হচ্ছে, অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস করা হচ্ছে। এছাড়া অর্থ সরবরাহ কমিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া বিলাসী পণ্য আমদানি কমানো হয়েছে।

এছাড়া চলতি বাজেটে গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটি আগামী অর্থ বছরেও অব্যাহত থাকবে। চাহিদার দিক থেকে অনেক কিছু হ্রাস করা হচ্ছে। অপরদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি, বাজার মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কারসাজিতে অস্থির ডলারের বাজার
মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কারসাজিতে অস্থির ডলারের বাজার

মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কারসাজিতে অস্থির ডলারের বাজার

সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এলো ডিসেম্বরে
সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এলো ডিসেম্বরে

সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এলো ডিসেম্বরে

কমল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম
কমল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম

কমল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম

বিদায়ি বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২২ শতাংশ
বিদায়ি বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২২ শতাংশ

বিদায়ি বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২২ শতাংশ

ইবিএলের ‘এক্সিলেন্স ইন পেআউট’ সম্মাননা পেলো নগদ
ইবিএলের ‘এক্সিলেন্স ইন পেআউট’ সম্মাননা পেলো নগদ

ইবিএলের ‘এক্সিলেন্স ইন পেআউট’ সম্মাননা পেলো নগদ

যে কারণে প্রায় ৭ লাখ গাড়ি ফিরিয়ে নিলো টেসলা
যে কারণে প্রায় ৭ লাখ গাড়ি ফিরিয়ে নিলো টেসলা

যে কারণে প্রায় ৭ লাখ গাড়ি ফিরিয়ে নিলো টেসলা

ভারতের পরিবর্তে থাইল্যান্ড গিয়ে খরচ করছেন বাংলাদেশিরা
ভারতের পরিবর্তে থাইল্যান্ড গিয়ে খরচ করছেন বাংলাদেশিরা

ভারতের পরিবর্তে থাইল্যান্ড গিয়ে খরচ করছেন বাংলাদেশিরা

রমজানে ভোজ্য তেলের দাম কমাতে কর ও ভ্যাট অব্যাহতি
রমজানে ভোজ্য তেলের দাম কমাতে কর ও ভ্যাট অব্যাহতি

রমজানে ভোজ্য তেলের দাম কমাতে কর ও ভ্যাট অব্যাহতি

বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হবে পাকিস্তানে
বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হবে পাকিস্তানে

বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হবে পাকিস্তানে

বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে
বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

মূল্যস্ফীতি সহনীয় হতে এক বছর সময় লাগবে: গভর্নর
মূল্যস্ফীতি সহনীয় হতে এক বছর সময় লাগবে: গভর্নর

মূল্যস্ফীতি সহনীয় হতে এক বছর সময় লাগবে: গভর্নর

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম