বাংলাখবর

ওবায়দুল কাদেরের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড়

বাংলা খবর, ঢাকা : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ‘সেকেন্ড ম্যান’ হিসেবে পরিচিত ওবায়দুল কাদের দেশে নাকি বিদেশে সেটা নিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকেই আলোচনা ছিল। অবশেষে তার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা কেটেছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তিন মাস তিনি দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। গত ৮ নভেম্বর সাবেক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিন মাস ওবায়দুল কাদের দেশেই ছিলেন। তিনি নিরাপদ স্থানে যত্ন-আত্তিতেই ছিলেন। অবশেষে সড়কপথে সিলেট হয়ে ভারতের মেঘালয়ের শিলং পৌঁছান এবং সেখান থেকে কলকাতায় চলে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

এদিকে ওবায়দুল কাদেরের মতো হেভিওয়েট নেতা কীভাবে এতদিন দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন, কারা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, এটা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছাড়লেন সে সম্পর্কে সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওবায়দুল কাদের এতদিন দেশে ছিলেন সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। সরকার জানতে পারলে তাকে গ্রেফতার করত।

ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছেড়েছেন, তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, ওবায়দুল কাদের গত তিন মাস বাংলাদেশে ছিলেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে তিনি গ্রেফতার হননি এবং পরবর্তী সময়ে তিনি কীভাবে বাংলাদেশ ছেড়েছেন—এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা দেওয়া হোক।’

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের দেশে থাকার বিষয়টি সরকার জানত না। জানলে তাকে গ্রেফতার করা হতো।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর রাজশাহীর বিজিবি সদর দফতর পরিদর্শনের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের খোঁজ দিতে পারলে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

সে সময় সাংবাদিকরা ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। কিন্তু আপনারা তো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। যদি আমাকে ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন তা জানাতে পারেন, আমি আপনাদের একটি পুরস্কার দেবো। আপনারা আমাদের অনেক তথ্য দিতে পারেন।’

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের তিন মাস কোথাও লুকিয়ে থেকে দেশ ছেড়েছেন- এমন কোনো প্রমাণ সরকারের হাতে নেই।

প্রেস সচিব বলেন, ৫ আগস্টের পরে দেশে তিন দিন সরকার ছিল না। এক সপ্তাহ দেশে পুলিশ ছিল না। এ পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা দিয়েছে, ছাত্ররা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে এতটুকু বলতে পারি, এ সরকারের দৃষ্টিতে যা ধরা পড়ছে তাই করছে।

কার প্রশ্রয়ে ছিলেন কাদের, কীভাবে পালালেন

৫ আগস্টের আগে বেশ সরব ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি প্রতিদিনই গণমাধ্যমের শিরোনামে থাকতেন। তবে ৩ আগস্ট থেকে তাকে আর গণমাধ্যমের সামনে আসতে দেখা যায়নি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা পালিয়ে কিংবা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর লাপাত্তা ছিলেন ওবায়দুল কাদেরও। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে তার ব্যাপারে সংবাদ হলেও কেউই নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে। তখন অনেকের ধারণা ছিল, তিনি অনেকের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে আছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেনি।

সূত্রের খবর, প্রায় তিন মাস প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়াতেই ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি নিরাপদে ও বেশ আরাম-আয়েশেই ছিলেন। সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হন। তার এই নিরাপদে দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের হাত থাকতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে ভারতে থাকা শেখ হাসিনার কোনো সুপারিশ ছিল না। কারণ, তিনি ওবায়দুল কাদেরের ওপর অনেকটা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর ভারতে পালানোর আগে ওবায়দুল কাদের সিলেটে আশ্রয়ে ছিলেন। সেখান থেকে সড়কপথে বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং পৌঁছান। সেখান থেকে যান কলকাতায়। সেখানে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা অবস্থান করছেন তাদের কারও কারও সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তারা সবাই ভারত সরকারের আনুকূল্য পাচ্ছেন। ফলে অনেকের পাসপোর্ট না থাকলেও তেমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।

কাদেরের প্রতি ক্ষুব্ধ হাসিনাসহ দলের নেতাকর্মীরা!

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার পেছনে ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করেন অনেকেই। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাকে দায়ী করছেন। তিনি আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মূলত আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দেন।

রাজপথে ছাত্রদের আন্দোলন যখন প্রকট হচ্ছিল তখন কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় লোকজনও তার তীব্র সমালোচনা করতে থাকেন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ডেকেছিলেন আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করতে। সেখানেও তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে নেতারা তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দেন।

আগস্টের শুরু থেকেই ওবায়দুল কাদের দৃশপটের বাইরে চলে যান। সূত্র মতে, শেখ হাসিনা তার প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। তার পরিবর্তে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে দায়িত্ব দেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি আওয়ামী লীগের। পালাতে হয় দলীয় প্রধানসহ বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে।

টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করা দলটি এখনো অনেকটা ছন্নছাড়া অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করার দায় পুরোটাই বর্তাচ্ছে দলটির ওপর। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ
যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ

যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ

ওবায়দুল কাদেরের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড়
ওবায়দুল কাদেরের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড়

ওবায়দুল কাদেরের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড়

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হতে পারে জানুয়ারিতে
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হতে পারে জানুয়ারিতে

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হতে পারে জানুয়ারিতে

টবি ক্যাডমানকে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ
টবি ক্যাডমানকে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ

টবি ক্যাডমানকে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ

অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার

অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার

সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান গ্রেফতার
সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান গ্রেফতার

সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান গ্রেফতার

সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম গ্রেপ্তার
সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম গ্রেপ্তার

সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম গ্রেপ্তার

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গ্রেপ্তার
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গ্রেপ্তার

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গ্রেপ্তার

ভারতে পালানোর সময় সাবেক বিচারপতি মানিক আটক
ভারতে পালানোর সময় সাবেক বিচারপতি মানিক আটক

ভারতে পালানোর সময় সাবেক বিচারপতি মানিক আটক

১৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর সাংবাদিক তাহির হত্যায় মামলা নিল পুলিশ
১৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর সাংবাদিক তাহির হত্যায় মামলা নিল পুলিশ

১৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর সাংবাদিক তাহির হত্যায় মামলা নিল পুলিশ

প্রধান বিচারপতির পর আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগ
প্রধান বিচারপতির পর আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগ

প্রধান বিচারপতির পর আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগ

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের বৈধতা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট