বাংলাখবর
এবার সুইজারল্যান্ডের পদক্ষেপে ভারতের মাথায় হাত!
বাংলা খবর ডেস্ক : একের পর এক বন্ধু হারাচ্ছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় এখন প্রায় বন্ধুহীনই বলা যায় দেশটিকে। এবার সীমানা পেরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে দুঃসংবাদ। ভারতকে ‘অসহযোগী দেশ’র তালিকায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠেকেছে তলানীতে।
এছাড়া আরব আমিরাত আরেক ধাপ এগিয়ে ভারতীয়দের ভিসা দেয়ার হার কমিয়েছে ব্যাপক হারে। এবার পশ্চিমের দেশ সুইজারল্যান্ড থেকে এলো দুঃসংবাদ। দেশটি তাদের ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ ক্যাটাগরি থেকে বাদ দিয়েছে ভারতকে।
একটা সময়ে চিজ, চকোলেট আর ঘড়ির দেশের কাছ থেকে জুটেছিলো ‘সবচেয়ে পছন্দের রাষ্ট্র’ বা ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’-এর (এমএফএন) তকমা। কিন্তু হঠাৎ করেই নয়াদিল্লির মাথা থেকে সেই মুকুট কেড়ে নিয়েছে দেশটি। ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ খ্যাত সুইজারল্যান্ডের এই পদক্ষেপে রীতিমতো মাথায় হাত মোদি সরকারের!
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে ভারতের শেয়ার বাজারে। আগামী দিনে কমতে পারে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ।
আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এমএফএন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে সুইজারল্যান্ড। ওই তারিখ থেকে সুইজারল্যান্ডে ব্যবসা করা ভারতীয় সংস্থাগুলিকে তাদের আয়ের উপর ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশের ক্ষেত্রে বেশি কর দিতে হবে। এর পরিমাণ ১০ শতাংশ বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া সুইস নাগরিকদের ভারতে ব্যবসা বা শেয়ারের বিনিয়োগ থেকে আয়ের উপর বেশি হারে কর দিতে হবে। এর ফলে ভারতের বাজারে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে কমতে পারে বলে মনে করেছন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ভারতে।
ভারতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করা সত্ত্বেও নয়াদিল্লির উপর সুইস প্রশাসনের ক্ষোভের পেছনে আছে ‘দ্বৈত কর সংক্রান্ত চুক্তি’ বা ‘ডাবল ট্যাক্স অ্যাভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ (ডিএটিটি)। বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর বিবৃতি দিয়েছে সুইস অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানেই উঠে এসেছে গত বছর নেস্লে মামলায় দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়।
‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ বা ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ’ বিশেষণটি মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিতে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে কোনও একটি দেশকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে অপর রাষ্ট্র। এই সুবিধায় শুল্ক ও করের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকে।
ভারত ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ‘দ্বৈত কর সংক্রান্ত চুক্তি’ রয়েছে। এই অবস্থায় নয়াদিল্লিকে এমএফএনের তকমা দিয়েছিল বার্ন। এই দু’য়ের জোরে ভারতে বাণিজ্যরত সুইস সংস্থাগুলিকে যাতে কম কর দিতে হয়, সেই সুবিধা চেয়েছিলো সুইজারল্যান্ড।
বিদেশে বিনিয়োগ বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে নিয়মমাফিক দু’টি দেশে কর দিতে হয়। এতে অনেকটাই কমে যায় লাভের অংক। সেই সমস্যা মেটাতে ‘দ্বৈত কর সংক্রান্ত চুক্তি’ করে বাণিজ্যরত দুই রাষ্ট্র। এই চুক্তির ফলে কর ছাড় পান বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
সুইজারল্যান্ডের অভিযোগ, ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বা ওইসিডিভুক্ত দেশগুলিকে বেশি পরিমাণ করছাড় দিচ্ছে ভারত। অন্য দিকে, চুক্তি থাকা সত্ত্বেও নেস্লের মতো সুইস সংস্থাকে বেশি কর দিতে হচ্ছে। ফলে আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না। এই কারণ দেখিয়েই দিল্লিকে দেওয়া ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ’-এর তকমা কেড়ে নিয়েছে বার্ন।
কয়েক বছর আগে ইউরোপের লিথুয়ানিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার কলম্বিয়ার সঙ্গে বিশেষ বাণিজ্যচুক্তি করে ভারত। সেই চুক্তি অনুযায়ী, এই দুই দেশের সংস্থাগুলির লভ্যাংশের উপর মাত্র পাঁচ শতাংশ আয়কর ধার্য করেছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে সুইস সংস্থা নেস্লের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ১০ শতাংশ হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে।
লিথুয়ানিয়া এবং কলম্বিয়া পরবর্তী সময়ে ওইসিডিতে যোগ দেয়। এই সংগঠনটির সদর দফতর রয়েছে ফ্রান্সের প্যারিসে। সংশ্লিষ্ট দেশ দু’টি ওইসিডিতে গেলেও সেখানকার সংস্থাগুলির লভ্যাংশের উপর করের ক্ষেত্রে কোনো বদল করেনি নয়াদিল্লি।
২০২১ সালে ভারতের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে সুইস প্রশাসন। এর পরই সেখানকার সংস্থা নেস্লে তাদের লভ্যাংশের উপর মাত্র পাঁচ শতাংশ কর দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু নয়াদিল্লির যুক্তি ছিলো, লিথুয়ানিয়া এবং কলম্বিয়ার সঙ্গে আগেভাগেই চুক্তি করা হয়েছে। ওইসিডি ভুক্ত অন্য দেশগুলিকে এই সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। আর এই চুক্তির সঙ্গে সুইস সংস্থা নেস্লের আয়করের কোনও সম্পর্ক নেই।
কিন্তু নেস্লে বিষয়টি মানতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য দিল্লি হাইকোর্টে মামলা ওঠে। পরে তা চলে যায় সুপ্রিম কোর্টে। ২০২৩ সালে দেওয়া রায়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, দ্বৈত চুক্তির অধীনে আপনা থেকেই পছন্দসই কর ঠিক করা যাবে, এমনটা নয়। এ জন্য আয়কর আইন অনুসারে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। এই রায়ের জেরে আপাতত নেস্লেকে ১০ শতাংশ করই দিতে হবে।
এদিকে সুইস প্রশাসন বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ায় দুই দেশের দ্বৈতকর চুক্তি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘সুইস সরকারের পদক্ষেপে আমরা হতাশ। নতুন করে দ্বৈত চুক্তির অনেক কিছু আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।’
এমতাবস্থায় ভারতের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা সংস্থা জিটিআরআই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সুইস সংস্থাগুলি ভারতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা পাল্টালে কয়েক হাজার কোটি ডলার লগ্নি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, দ্য হিন্দু, আনন্দবাজার
এই বিভাগের আরও খবর
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা
ভারতেও ছড়াল এইচএমপিভি ভাইরাস, আক্রান্ত ২ শিশু
ভারতেও ছড়াল এইচএমপিভি ভাইরাস, আক্রান্ত ২ শিশু
পদত্যাগ করছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
পদত্যাগ করছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
চীনের নতুন দুই প্রশাসনিক অঞ্চল, নিজেদের ভূখণ্ড জানিয়ে দিল্লির প্রতিবাদ
চীনের নতুন দুই প্রশাসনিক অঞ্চল, নিজেদের ভূখণ্ড জানিয়ে দিল্লির প্রতিবাদ
গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা, ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা, ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবি, ২৭ জনের মৃত্যু
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবি, ২৭ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই: পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই: পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শিশু হতাহত বাড়ছে, বিশ্ব নীরব!
যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শিশু হতাহত বাড়ছে, বিশ্ব নীরব!
২০২৫ সাল নিয়ে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন বাবা ভাঙ্গা ও নস্ট্রাডামাস
২০২৫ সাল নিয়ে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন বাবা ভাঙ্গা ও নস্ট্রাডামাস
বর্ণিল উৎসবে নতুন বছরকে স্বাগত জানাল সিডনি
বর্ণিল উৎসবে নতুন বছরকে স্বাগত জানাল সিডনি
ইউক্রেনকে আরও ২৫০ কোটি ডলার সাহায্যের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
ইউক্রেনকে আরও ২৫০ কোটি ডলার সাহায্যের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
কয়েক শ যুদ্ধবন্দী বিনিময় করল রাশিয়া ও ইউক্রেন
কয়েক শ যুদ্ধবন্দী বিনিময় করল রাশিয়া ও ইউক্রেন