বাংলাখবর
হাসিনার গোপন কারাগারের বর্ণনা দিলেন ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম
বাংলা খবর ঢাকা : শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে গত আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গোপন কারাগার থেকে বের করা হয় ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাসেমকে। ৪০ বছর বয়সী আহমেদকে একটি গাড়ি থেকে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি কর্দমাক্ত খাদে জীবিত ফেলে দেওয়া হয়। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আট বছরে এই প্রথম আমি তাজা বাতাস পেলাম।
আমি ভেবেছিলাম ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।'অহমেদকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, যেটিকে আয়নাঘর নাম দেওয়া হয়েছিল। কারণ এর বন্দিদের নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে দেখার সুযোগ ছিল না। আহমেদকে জানালাবিহীন নির্জন কারাগারে চব্বিশ ঘন্টা বেঁধে রাখা হত। বহির্বিশ্বের খবর প্রচার না করার জন্য এর কারারক্ষীদের প্রতি কঠোর নির্দেশ ছিল।বাইরের আওয়াজ গোপন করার জন্য আয়নাঘরে সারা দিন গান বাজানো হত।
এটি আহমেদকে নামাজের সময় জানতে এবং তার অপহরণের পর থেকে কতদিন কেটে গেছে তার হিসাব রাখতে বাধা দিত। গান বন্ধ হলে, তিনি অন্যান্য বন্দীদের যন্ত্রণার শব্দ শুনতে পেতেন। তিনি বললেন, 'ধীরে ধীরে, আমি বুঝতে পারি যে আমি একা নই। আমি মানুষের কান্না শুনতে পেতাম, লোকেদের অত্যাচার করা হত, আমি মানুষের চিৎকার শুনতে পেতাম।হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত বছর জানায়, হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ৬শ’রও বেশি মানুষকে জোরপূর্বক গুম করেছে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তাদের অনেককে একটি গোপন স্থানে রাখা হয়েছে।
কিন্তু২০২২ সালে বিদেশে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত জনসাধারণের কাছে অজানা ছিল আয়নাঘরের অস্তিত্ব। তবে, হাসিনা সরকার দাবি করে এসেছে যে এর কোনও অস্তিত্ব নেই। হাসিনা সরকার জোরপূর্বক গুম করার বিষয়টিও অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেছেন।আহমেদ তার অপহরণের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত। তার বাবা মীর কাসেম আলী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল জামায়াত-ই-ইসলামির একজন জেষ্ঠ্য।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে থাকা বাংলাদেশিদের নির্যাতনকারী একটি আধাসামরিক গোষ্ঠী পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। মীর কাসেম আলী এবং আরও কয়েকজনকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এটি দৃশ্যত সেই সংঘাতের শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রয়াস ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একে রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূল করার জন্য হাসিনার জন্য একটি উপায় হিসাবে ব্যাপকভাবে দেখা হয়ে থাকে।মীর কাসেম প্রকৃতই দোষী কি না, তা থেকে জানার কোন উপায় ছিল না। সেই সময় ৩২ বছর বয়সী আহমেদ পক্ষে উচ্চ আদালতে মামালা লড়ার জন্য লন্ডনে বারের দারস্থ হন। ট্রাইব্যুনালে পদ্ধতিগত ত্রুটি এবং পক্ষপাতমূলক বিচার কার্যের বিষয়ে তার নিয়মিত সংবাদ বিবৃতিগুলো অধিকার গোষ্ঠী এবং জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রতিধ্বনিত হতে থাকলে, তিনি হাসিনা সকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।
সাদা পোশাকের লোকেরা এক রাতে আহমেদের বাড়িতে প্রবেশ করে, এবং তাকে তার পরিবারের সামনে সিঁড়ি দিয়ে টেনে নামিয়ে একটি অপেক্ষমাণ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনই আমার ভয়ঙ্করতম দু:স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে তারা আমার বাবার ফাঁসির কয়েক দিন আগে আমাকে গুম করবে।’আহমেদকে গুম করার চার সপ্তাহ পর মীর কাসেমের ফাঁসি হয়। প্রায় তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কাসেম জানতেন না, যদি না তার জেলারদের একজন মুখ ফস্কে বলে ফেলতেন। যে গাড়িটি তাকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল তা দ্রুতগতিতে চলে যাওয়ার পর কাসেম রাতভর হেঁটে তার বাড়ির পথ খোঁজার চেষ্টা করেন।
নিছক কাকতালীয়ভাবে, তিনি এক পর্যায়ে একটি দাতব্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি মেডিকেল ক্লিনিকের সামনে চলে আসেন, যেখানে তার বাবা একসময় ট্রাস্টি ছিলেন। একজন সদস্য তাকে চিনতে পারেন এবং তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি ফোন নম্বর খুঁজে বের করেন, যারা তার জন্য ছুটে এসেছিল।কিন্তু প্রথমে, আহমেদের আশেপাশের লোকদের উত্তেজিত আলোচনার পলে কাসেম জানতে পারেন যে কয়েক সপ্তাহের ছাত্র বিক্ষোভের সফল হওয়ার কারণে তার মুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, 'এই পুরো ব্যাপারটাই সম্ভব হয়েছে কয়েকজন কিশোর-তরুণের দ্বারা। যখন আমি এই শিশুদের, এই বাচ্চাদের পথ দেখাতে দেখি, আমি সত্যিই আশাবাদী হই যে এটিই সেই সুযোগ হবে যাতে বাংলাদেশ একটি নতুন দিশা খুঁজে পাবে।
আহমেদের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বলেন, আহমেদের ঘটনা অপপ্রচারের কারণে তিনি তাদের সন্তানদের স্কুলে অন্য মায়েদের দ্বারা বর্জিত বোধ করতেন। তার অন্তর্ধানের প্রতিটি বার্ষিকীতে পরিবারকে নিয়মিতভাবে হুমকি দেয়া হত এবং এটি প্রচার বন্ধ করার জন্য সতর্ক করা হত। আহমেদকে নিয়ে যাওয়ার সময় তার দুই মেয়ের বয়স ছিল তিন ও চার বছর। বড়জন তার অপহরণ প্রত্যক্ষ করেছে এবং এখনও কর্তৃপক্ষের কিছু লোকের ভয়ে ভীত, যেমন তার স্কুলের বাইরে অবস্থান নেয়া এক বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরী। আহমেদের মা আয়েশা খাতুন এএফপিকে বলেন, 'এটি আমাদের কাছে আট বছর মনে হয়নি। এটি আটটি জীবনকালের মতো মনে হয়েছে।'
এই বিভাগের আরও খবর
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা, দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যাখ্যান
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী-কন্যা, দুর্নীতির অভিযোগে প্রত...
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন
জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : প্রধান উপদ...
শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল
শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল
খালেদাকে লন্ডন নিতে কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়
খালেদাকে লন্ডন নিতে কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়
মঙ্গলবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
মঙ্গলবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
বাংলাদেশকে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলার দেবে এডিবি
বাংলাদেশকে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলার দেবে এডিবি
ব্রিটিশ এমপি রূপাকে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
ব্রিটিশ এমপি রূপাকে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
টিউলিপকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেন আ.লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী
টিউলিপকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেন আ.লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে বাসায় গেলেন সেনাপ্রধান
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে বাসায় গেলেন সেনাপ্রধান
ভ্যাট বাড়লেও নিত্যপণ্যের দামে পড়বে না প্রভাব: অর্থ উপদেষ্টা
ভ্যাট বাড়লেও নিত্যপণ্যের দামে পড়বে না প্রভাব: অর্থ উপদেষ্টা
শুধু শেখ হাসিনা ইস্যুতে আটকে থাকবে না বাংলাদেশ ভারত সর্ম্পক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
শুধু শেখ হাসিনা ইস্যুতে আটকে থাকবে না বাংলাদেশ ভারত সর্ম্পক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা