বাংলাখবর
মরণ নেশা অনলাইন জুয়া
বাংলা খবর ডেস্ক : ডিজিটালাইজেশনের যুগে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে দেশের মানুষ। স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনলাইনে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, টুইটার বাজি ধরা হচ্ছে। ডিজিটাল যুগে এই ভাল কাজের ব্যবহারের মতো মন্দ কাজ তথা খারাপ কাজেও ব্যবহার করছে এক শ্রেণির অপরাধী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন অনলাইন জুয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। ফলে ডিজিটালে যেমন সুবিধা ভোগ করছে তেমন অপরাধের ঘটনাও ঘটছে। ক্যাসিনো, সাধারণ জুয়া খেলার চেয়েও এই অনলাইন জুয়ার বাজি আরো বেশি ভয়ঙ্কর। প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেখানে সেখানে থেকে এই জুয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার লাখ লাখ ডলার লেনদেন হচ্ছে। এতে অপরাধীরা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত মানুষের মধ্যে জুয়ার নেশা ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অনলাইন বাজির মরণ খেলায়। জুয়ার নেশায় বুদ হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। কেউ আবার বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। এমনকি প্রভাবশালী পরিবার, পাবলিক সেলিব্রেটিরাও এই অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। অনলাইনে এই জুয়া খেলা হওয়ায় রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও এই ‘অপরাধ খেলা’ ছড়িয়ে পড়েছে।
তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অনলাইনে জুয়ার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে মন্ট্রিয়াল টাইগার্সের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব। ওই দলের অফিসিয়াল পার্টনার ছিল অনলাইন জুয়ার ‘বাবু৮৮’ নামের এই সাইটটি। ২০২২ সালে অনলাইন জুয়ার সাইট বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন সাকিব আল হাসান। শুধু কি তাই! গত বছর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ছোট বোন জান্নাতুল হাসান ‘১১রিপশবঃ.পড়স’ নামে একটি অনলাইন বেটিং (অনলাইনে বাজি ধরা) অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্তে এ চিত্র উঠে আসে।
অলরাউণ্ড ক্রিকেটারের বোন জান্নাতুল হাসানের মতো দেশের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কৌতূহলের বশে এই অনলাইন জুয়ার বাজি ধরা শুরু করে এখন পেশাদার জুয়ার বাজিগর হয়ে গেছেন। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা অনলাইন জুয়ার বাজি ধরার ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ক্যাসিনো, সাধারণ জুয়ার মতো অপরাধ কাণ্ড অনলাইন জুয়ার অপরাধের কাছে শিশু অপরাধ। সারাদেশে এই ডিজিটাল অপরাধ অনলাইন জুয়া শহর থেকে ছড়িয়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এই অনলাইন জুয়ায় বাজি ধরার অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে করে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগের কারণ হয়ে গেছে।
অনলাইন জুয়ার বাজি ধরার অপরাধ সমাজে নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কৌতূহলী তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। অনলাইন জুয়ায় প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ পাঁচ-দশ হাজার টাকায় জুয়া শুরু করে লোভে পড়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আসক্তদের মধ্যে অনেকেই ঋণ করে জুয়ায় হেরে আত্মহত্যাও করছেন। সঠিক আইন ও তথ্য না থাকায় অনলাইন জুয়া পরিচালনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না আইন-শৃংখলা বাহিনী। জুয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে সর্বস্ব হারানোর কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে কেউ নেমে পড়েছেন খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতায়। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে ধনী-গরিব, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, শিক্ষিত বেকার কে নেই এই নেশায়। আবাসিক হোটেল, বাসা-বাড়ি, রেস্টহাউস, গেস্টহাউস থেকে শুরু করে ভাতের হোটেলেও অনলাইন জুয়ার আসর বসছে।
অনলাইন জুয়ার সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। বর্তমানে যখন দেশে ডলার সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে তখন জুয়ার বিনিয়োগ থেকে শত শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে। বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যম ছাড়াও লেনদেনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেট ও অন্যান্য মাধ্যমেও পেমেন্ট করছে জুয়াড়িরা। অনলাইনে জুয়ায় ছোট ছোট বাজির টাকা দিন শেষে একটি বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দেশ থেকে ডলারের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে প্রতিদিন। জুয়ার অ্যাপস নিয়ন্ত্রকরা বিদেশে বসে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্থানীয় সিন্ডিকেট ও এজেন্টদের মাধ্যমে এ টাকা ডলারে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ হয়েছে কোটি টাকার মালিক। প্রতিদিন ৩০০ সাইটে বাংলাদেশিরা অনলাইনে জুয়া খেলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন জুয়া একটা নেশার মতো, এখানে একবার ঢুকলে নিঃস্ব হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অংশগ্রহণকারীরা নিঃস্ব হওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, আইন-শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব পড়ছে। সময়োপযোগী আইন করার পাশাপাশি পুলিশের মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন। মোবাইল ও টেকনোলজির সহজলভ্যতায় মানুষ খুব সহজেই জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর পেছনে দুটি চক্র জড়িত। একটি জুয়ার এজেন্ট অন্যটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট। এজেন্ট ছাড়া কেউ জুয়া খেলতে পারে না। অর্থাৎ, টাকা লেনদেন সম্ভব নয়। টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে যদি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বর ব্যবহার না হয় তাহলে অনেকাংশে অনলাইন জুয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
এই বিভাগের আরও খবর
কেসলার সিন্ড্রোম: মহাকাশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে
কেসলার সিন্ড্রোম: মহাকাশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে
ভারতে স্টারলিঙ্কে বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা
ভারতে স্টারলিঙ্কে বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা
প্রায় ৭ লাখ গাড়ি ফিরিয়ে নিলো টেসলা, নেপথ্যে যে কারণ
প্রায় ৭ লাখ গাড়ি ফিরিয়ে নিলো টেসলা, নেপথ্যে যে কারণ
পৃথিবী থেকে ৪৮৯ আলোকবর্ষ দূরে নতুন সৌরজগতের সন্ধান, আছে ৩ সূর্য
পৃথিবী থেকে ৪৮৯ আলোকবর্ষ দূরে নতুন সৌরজগতের সন্ধান, আছে ৩ সূর্য
বিশ্বজুড়ে থমকে গেল ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ, সাড়ে তিন ঘন্টা পর সচল
বিশ্বজুড়ে থমকে গেল ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ, সাড়ে তিন ঘন্টা পর সচল
একই সরলরেখায় মিলছে পৃথিবী-সূর্য-বৃহস্পতি, দেখা যাবে যেভাবে
একই সরলরেখায় মিলছে পৃথিবী-সূর্য-বৃহস্পতি, দেখা যাবে যেভাবে
'মস্তিষ্কের চিপ’ ট্রায়ালের অনুমতি পেল মাস্কের নিউরালিংক
'মস্তিষ্কের চিপ’ ট্রায়ালের অনুমতি পেল মাস্কের নিউরালিংক
কিছুক্ষণ পরপর কারা ফোন চেক করেন, কী বলছে মনোবিজ্ঞান
কিছুক্ষণ পরপর কারা ফোন চেক করেন, কী বলছে মনোবিজ্ঞান
দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালু করবে সরকার
দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালু করবে সরকার
চমক নিয়ে আসছে ব্লুটুথ ৬.০ ভার্সন
চমক নিয়ে আসছে ব্লুটুথ ৬.০ ভার্সন
ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানার ঘটনা, যা জানাল গুগল
ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানার ঘটনা, যা জানাল গুগল
ফ্যাক্ট চেকিং ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এআই টুল তৈরি
ফ্যাক্ট চেকিং ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এআই টুল তৈরি